দলবল নিয়ে হাসপাতালে চাঁদা চাইতে গেলেন জবি ছাত্রদল সভাপতি!

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) ছাত্রদলের সভাপতি মেহেদী হাসান হিমেলের বিরুদ্ধে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ উঠেছে। এ সংক্রান্ত একটি সিসিটিভি ফুটেজ এসেছে ঢাকা মেইলের হাতে। তবে ছাত্রদলের এই নেতা নিজের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি দাবি করেছেন, তার মামার একটি ফ্লোর বেদখল হয়ে গিয়েছিল। সেটা দখলে সহযোগিতা করতে গিয়েছিলেন।

জানা গেছে, রোববার (১৩ এপ্রিল) বিকেলের দিকে রাজধানীর মেডিলাইফ স্পেলাইজড হাসপাতালে যান হিমেল। ফুটেজে দেখা যায়, এসময় হিমেলের সঙ্গে ২০ জনের বেশি মানুষ উপস্থিত ছিলেন।

ভুক্তভোগী ও মেডিলাইফ হাসপাতালের মালিক অধ্যাপক ডা. মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আসরের নামাজের পরে অপারেশন থিয়েটারে দেখি ২০ থেকে ২৫ জন ছেলে ঢুকে পড়ে। আমি জিজ্ঞেস করি- আপনারা কারা। তো একজন বলতেছে, তোর নাম কি ডা. মোশাররফ?’

চিকিৎসক বলেন, ‘তখন আমি বলি, আপনি এভাবে কথা বলতেছেন কেন?‌ তখন সে বলে, তোর কাছে আসছি তুই আয়। সে নিজেকে হিমেল নামে পরিচয় দেয়। বলে সে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিপি। সে বলে, তোরে ঈদের আগে দুইবার ফোন দিয়েছি। তোর মোবাইলটা দে আগে। তখন আমি বলি, আপনি মোবাইল চাচ্ছেন কেন?”

মোশাররফ জানান, এসময় তার হাত থেকে মোবাইল নিয়ে নেন হিমেল। এসময় তিনটি অপারেশন চলছিল। এরপরও হিমেল তাকে হুমকি দিয়ে বলেন, রুমে চল, তোকে শায়েস্তা করব।

ডা. হারিছ আমার মামা হন এবং তাকে সহযোগিতা করতে গিয়েছি। আমার আত্মীয় হলে আমি কি যেতে পারি না?
মেহেদী হাসান হিমেল, জবি ছাত্রদল সভাপতি
ভুক্তভোগী বলেন, ‘তারপরে রুমে নিয়ে আমাকে গালাগালি, ধাক্কাধাক্কি শুরু করে। আমার শার্টের কলার ধরে টানাটানি করে। এরপরই সে চাঁদা দাবি করে বলে, তুই এখনই আমাকে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দিবি। তখন আমি জানতে চাই, মূলত কী হয়েছে। তখন সে বলে, তোর কাছে ঈদের আগেও আমি ২০ লাখ টাকা চেয়েছিলাম, কিন্তু দিস নাই। তুই এখন আমাকে টাকা দিবি অথবা একটা চেকে লিখে দিবি।’

ডা. মোশাররফ দাবি করেন, এসময় হিমেল চাঁদা আদায় করার জন্য আওয়ামীপন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের ডা. মোর্শেদা পারভীন, ডা. হারিছ উদ্দিন ও ডা. মাহবুবুর রহমানকে নিয়ে যান।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. হারিছ উদ্দিন বলেন, ‘এখানে চাঁদা চাওয়ার কিছু নেই। মেডিলাইফ হাসপাতালের তিন তলার ফ্লোরের মালিক আমিসহ আরও তিনজন। এটি মেডিলাইফকে ভাড়া দেওয়া হয়েছে ছয় থেকে সাত মাস আগে। সরকার পরিবর্তন হওয়ার পর ডা. মোশাররফ বিএনপি করে হুমকি দিয়ে ফ্লোরটি তালা লাগিয়ে দেন এবং দখল করেন।’

হারিছ উদ্দিন বলেন, ‘আর্মির সহায়তায় ফ্লোরটি খুলে আবার মেডিলাইফ যেভাবে চলছিল, সেভাবে চলে। পরে আবার ১ মার্চ ফ্লোরটিতে তালা লাগিয়ে দেন ডা. মোশাররফ। পরে জিজ্ঞেস করতে গিয়েছি, মালিকানাধীন ফ্লোরটিতে তালা লাগিয়ে দিলেন কেন? এতদিন যেতে পারি নাই, রোববার জিজ্ঞেস করতে গিয়েছি।’

চাঁদা দাবির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি মেহেদী হাসান হিমেল। তিনি বলেন, ‘চাঁদা চাওয়ার বিষয়টি ভিত্তিহীন। ডা. মোশাররফ অবৈধভাবে হাসপাতাল দখল করেছেন এবং ১ মার্চ থেকে ফ্লোরটিতে তালা ঝুলিয়ে রেখেছেন।’

হিমেল বলেন, ‘ডা. হারিছ আমার মামা হন এবং তাকে সহযোগিতা করতে গিয়েছি। আমার আত্মীয় হলে আমি কি যেতে পারি না?’

দখল করার বিষয়ে ডা. মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘২০২১ সালের জানুয়ারির দিকে তৃতীয় ফ্লোরে এভার হেলথ নামে আমি কোম্পানি দিয়েছিলাম। আমি বিএনপির চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকায় স্বাচিপ ও আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে ডা. হারিছসহ অন্যরা আমার প্রতিষ্ঠান দখল করে নেয়। সরকার পরিবর্তন হওয়ার পর আমার প্রতিষ্ঠান আমি বুঝে নিই। এ সংক্রান্ত সকল বৈধ কাগজপত্র আমার কাছে আছে।’

তালা দেওয়ার বিষয়ে ডা. মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘মালিকানা নিয়ে ঝামেলা থাকায় ১ মার্চ তালা দিয়েছে প্রশাসন। যাতে কোনো ধরনের ঝামেলা না হয়। বিচার হওয়ার পর তালা খুলে দেওয়া হবে। এ অবস্থায় হিমেল এসে আমার কাছে চাঁদা চেয়েছে।’

এই চিকিৎসক বলেন, ‘১ মার্চের পর থেকে তালাবদ্ধ রয়েছে তৃতীয় ফ্লোর। এরমধ্যে অবৈধভাবে তালা ভেঙে কিছু যন্ত্রপাতি বের করে নিয়ে গেছেন ডা. হারিছ ও অন্যান্যরা। এর ভিডিও ফুটেজ আমার কাছে আছে।

Scroll to Top