চীনের কঠোর জবাব, যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো বন্ধ হলো ২ গুরুত্বপূর্ণ পণ্য! ট্রাম্পের মাথায় হাত

চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান বাণিজ্য সংঘাতের নতুন অধ্যায় হিসেবে চীন যুক্তরাষ্ট্রে বিরল খনিজ পদার্থ ও চুম্বক রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে। এই সিদ্ধান্তের প্রেক্ষাপটে দেখা যাচ্ছে, ইতিমধ্যেই চীনের বিভিন্ন বন্দর থেকে এসব কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ পণ্যের চালান পাঠানো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই পদক্ষেপ মার্কিন অর্থনীতির জন্য একটি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে, কেননা এসব কাঁচামাল মূলত বৈদ্যুতিক যানবাহন, সেমিকন্ডাক্টর, মহাকাশ প্রযুক্তি এবং প্রতিরক্ষা খাতের সরঞ্জাম তৈরিতে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।

এই নিষেধাজ্ঞাকে চীন সরকারের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বাণিজ্য যুদ্ধের একটি কৌশলগত জবাব হিসেবে দেখা হচ্ছে। গত ৪ এপ্রিল তারিখে চীন সরকার ছয় ধরনের বিরল মৃত্তিকা এবং চুম্বক রপ্তানির ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে। উল্লেখ্য, বিশ্বের মোট উৎপাদনের প্রায় ৯০ শতাংশ বিরল খনিজ ও চুম্বকই চীন থেকে সরবরাহ করা হয়, যা মার্কিন প্রযুক্তি ও প্রতিরক্ষা শিল্পের জন্য অপরিহার্য উপাদান হিসেবে বিবেচিত হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির উপর এই সিদ্ধান্তের প্রভাব অত্যন্ত গভীর হতে পারে বলে বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন। বিশেষ করে বৈদ্যুতিক গাড়ি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো, যেমন টেসলা এবং জেনারেল মোটরস, সেই সাথে সেমিকন্ডাক্টর শিল্প সরবরাহ সংকটের মুখোমুখি হতে পারে। এছাড়া, ড্রোন, রোবটিক্স এবং ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির মতো অত্যাধুনিক প্রযুক্তি খাতেও উৎপাদন প্রক্রিয়া বিঘ্নিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর ফলে মার্কিন কোম্পানিগুলোকে বাধ্য হয়ে বিকল্প বাজার খুঁজতে হতে পারে, যা তাদের উৎপাদন খরচ বাড়িয়ে দেবে।

চীন সরকার তাদের এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে কঠোর শর্ত আরোপ করেছে। এখন থেকে বিরল খনিজ ও চুম্বক রপ্তানির জন্য বিশেষ লাইসেন্সের প্রয়োজন হবে। তবে, লক্ষণীয় যে চীন এখন পর্যন্ত কোনো লাইসেন্স ইস্যু করেনি, যা কার্যত এই পণ্যগুলোর রপ্তানি সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হওয়ার সমতুল্য। এই অবস্থায় মার্কিন শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো চীনের বিকল্প উৎস খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে, কিন্তু স্বল্প সময়ের মধ্যে তা সম্ভব নয় বলে মনে করা হচ্ছে।

ট্রাম্প প্রশাসন চীনের এই সিদ্ধান্তকে একটি “অর্থনৈতিক যুদ্ধের” অংশ হিসেবে অভিহিত করেছে। প্রশাসনের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা মন্তব্য করেছেন যে চীন দীর্ঘদিন ধরে অসাধু বাণিজ্য নীতি অনুসরণ করে আসছে এবং যুক্তরাষ্ট্র এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিকল্প সরবরাহ শৃঙ্খল গড়ে তোলার চেষ্টা করবে। তবে, বাস্তবতা হলো যে স্বল্পমেয়াদে চীনের এই নিষেধাজ্ঞা মার্কিন অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

বাণিজ্য বিশ্লেষকদের মতে, চীনের এই কৌশলগত পদক্ষেপের মূল উদ্দেশ্য হলো মার্কিন প্রযুক্তি খাতকে দুর্বল করা। তবে, এর একটি ইতিবাচক দিকও থাকতে পারে—যুক্তরাষ্ট্র হয়তো এখন থেকে নিজস্ব খনিজ সম্পদ উত্তোলন ও প্রক্রিয়াকরণের ক্ষেত্রে বিনিয়োগ বাড়াবে। কিন্তু তাৎক্ষণিকভাবে এই সিদ্ধান্ত বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খলে নতুন করে অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে। যদি যুক্তরাষ্ট্র দ্রুততার সাথে কোনো কার্যকর বিকল্প উৎস খুঁজে না পায়, তাহলে তাদের উচ্চপ্রযুক্তি ও প্রতিরক্ষা খাতে উল্লেখযোগ্য ধাক্কা লাগতে পারে, যা সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে প্রভাবিত করতে পারে।

Scroll to Top