পারভেজ হত্যা: ঘটনার সেই ‘দুই বান্ধবীকে’ খুঁজছে বিশ্ববিদ্যালয়-পুলিশ

প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের টেক্সটাইল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র জাহিদুল ইসলাম পারভেজ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন। যাদের কেন্দ্র করে ঘটনার সূত্রপাত এবং এই হত্যাকাণ্ড- সেই দুই বান্ধবীকে হন্যে হয়ে খুঁজছে পুলিশ ও ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্স বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তাদের কাছ থেকেই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাবে মনে করছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।

প্রত্যক্ষদর্শী সহপাঠিদের ভাষ্য অনুযায়ী, গত শনিবার (১৯ এপ্রিল) বেলা ৩টার দিকে মিডটার্ম পরীক্ষা শেষে পারভেজ তার বন্ধু সুকর্ণ, তরিকুল, ইমতিয়াজসহ কয়েকজনের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপরীতে র‍্যানকন বিল্ডিংয়ের সামনের একটি পুরি-শিঙাড়ার দোকানে দাঁড়িয়ে হাসি-ঠাট্টা করছিলেন। তাদের কিছুটা পেছনে ইউনিভার্সিটি অব স্কলারসের দুই ছাত্রী এবং প্রাইমএশিয়ার মেহেরাজ ইসলাম, আবু জহর গিফফারি পিয়াস ও মাহাথির হাসান অবস্থান করছিলেন। বন্ধুদের হাসাহাসি দেখে ওই দুই নারী শিক্ষার্থী মনে করেন, তাদের উদ্দেশ্য করে কটাক্ষ করা হচ্ছে। এ নিয়ে উভয়পক্ষে কথা-কাটাকাটি হয়।

বিষয়টি জানতে পেরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মোশাররফ হোসেন উভয় পক্ষকে ডেকে পাঠান। সেখানে টেক্সটাইল বিভাগের শিক্ষক সুষমা ছোঁয়াতী ও সাইকোলজি বিভাগের শিক্ষক আবুল হাশেমের উপস্থিতিতে মীমাংসার চেষ্টা করা হয়। প্রক্টরের পরামর্শে পারভেজ দুই ছাত্রীর কাছে ক্ষমাও চান। মীমাংসার পর সবাই যার যার মতো চলে গেলেও এরপরই ঘটে মর্মান্তিক হামলার ঘটনা।

পারভেজের সহপাঠীদের ভাষ্যমতে, প্রক্টর অফিসে মীমাংসা হওয়ার পরও ইংরেজি ও ইন্টারন্যাশনাল হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থী তাকে হুমকি দিতে থাকেন। এরপর বহিরাগতদের ডেকে এনে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় পারভেজকে। অভিযোগের ভিত্তিতে প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর কার্যালয়ে ডাকার পরও সামান্য অভিযোগে শিক্ষার্থীকে হত্যার ঘটনা সারা দেশে তীব্র প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে।

এদিকে হত্যার ঘটনায় নিহত পারভেজের চাচাতো ভাই হুমায়ুন কবীর বাদী হয়ে ৮ জনের নাম উল্লেখ করে বনানী থানায় একটি মামলা করেছেন। যার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের এলএলবি ও ইংরেজি বিভাগের তিন ছাত্র মাহাথি, মেহেরাব, আবুজর গিফারী ছাড়াও আরও পাঁচজনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। এছাড়া ২০ থেকে ৩০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। ঘটনায় সাথে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে সোমবার ৩ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ওই আদালত তাদের সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।

তবে হত্যাকাণ্ডের চার দিন পেরিয়ে গেলেও মামলার মূল অভিযুক্ত তিন শিক্ষার্থী এখনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে। তবে তাদের গ্রেপ্তারে বিশেষ টিম কাজ করছে বলে জানিয়েছেন বনানী থানার পরিদর্শক (অপারেশনস) এ কে এম মইনুদ্দিন।

তিনি দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি আসামিদের শনাক্ত করা হয়েছে এবং দ্রুত সময়ের মধ্যেই তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। আশা করছি খুব দ্রুতই তাদের গ্রেপ্তার করতে পারবো আমরা। এদের মধ্যে একজন এজাহারভুক্ত আসামি।

নারী দুই শিক্ষার্থী প্রসঙ্গে এ কে এম মইনুদ্দিন বলেন, আমরা সিসিটিভি ফুটেজ শনাক্ত করে কাজ করছি। যে বা যাহারা এর সাথে সম্পৃক্ত আছে আমরা সবাইকে শনাক্ত করার চেষ্টা করছি। তাদের সবাইকে গ্রেপ্তার করতে আমাদের বিশেষ টিম কাজ করছে বলে ও জানান তিনি।

মামলার আসামী নয় এমন তিনজনকে গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তিনজনের কেউই ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নয়, তারা প্রধান তিন আসামির স্কুল ফ্রেন্ড। গ্রেপ্তার তিনজন ও তিন আসামি বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুলে পড়াশোনা করেছে। আসামিদের ডাকে তারা সেদিন ঘটনাস্থলে গিয়েছিল। সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা তাদের শনাক্ত করা হয়েছে। তবে ইতিপূর্বে তাদের বিরুদ্ধে থানায় কোন অভিযোগ নেই। তারা এখন রিমান্ডে।

এদিকে, ঘটনার দিন ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্সের যে দুই নারী শিক্ষার্থী দিকে তাকিয়ে হাসাহাসির জেরে নিহত শিক্ষার্থী পারভেজকে হত্যার ঘটনায় প্রাথমিক তদন্তে অভিযুক্ত হিসেবে ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের ফাতেমা তাহসিন ঐশী (আইডি নম্বর ২৪১০৫০০১৩) এবং ইংরেজি বিভাগের ফারিয়া হক টিনা (আইডি নম্বর ২৪১০৪০০৪৮) এই দুই শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্সের রেজিস্ট্রার ক্যাপ্টেন মোবাশ্বের আলী খন্দকার দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একটি চিঠির মাধ্যমে অভিযুক্ত দুই ছাত্রী সম্পর্কে জানতে চেয়েছিল। এরপর প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে পক্টোরিয়াল কমিটির সদস্যরা বহিষ্কৃত দুই শিক্ষার্থীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও সফল হয়নি। ফলে তাদের সরাসরি কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। বাহ্যিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এবং তদন্তের স্বার্থে পুলিশি প্রতিবেদন বা চূড়ান্ত তদন্ত রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত তাদের ছাত্রত্ব সাময়িকভাবে স্থগিত থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

Scroll to Top