সাবেক রাষ্ট্রপতির দেশত্যাগে আবারও ‘চাপে’ রাষ্ট্রপতি!

সাবেক রাষ্ট্রপতি অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদের দেশত্যাগে শোরগোল পড়েছে। দিনভর সর্বত্র ছিল একই আলোচনা- কীভাবে দেশত্যাগ করার সুযোগ পেলেন আবদুল হামিদ। সুযোগ করে দেওয়া সে সব মহলকে আইনের আওতায় এনে বিচারের দাবিও উঠে এসেছে বিভিন্ন মহল থেকে।

আওয়ামী লীগের বাইরে প্রায় সব মহল আবদুল হামিদের দেশ ছাড়ার খবরে ক্ষোভ-বিক্ষোভে ফেটে পড়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নতুন করে আলোচনায় এসেছেন রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন। বলা হচ্ছে রাষ্ট্রপতির নির্দেশে বিমানবন্দর ইমিগ্রেশন ক্রস করার সুযোগ ঘটেছে সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের। এ ইস্যুটি সামনে এনে আবারও রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগের দাবি উঠেছে।

এদিকে সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের দেশত্যাগের ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে ইমিগ্রেশন পুলিশের একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে প্রত্যাহার ও মো. আবদুল হামিদের বিরুদ্ধে কিশোরগঞ্জের সদর থানায় দায়েরকৃত মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এবং এসবির একজন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। অতিরিক্ত আইজিপিকে (প্রশাসন) প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

অন্যদিকে, সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের দেশত্যাগের ঘটনায় স্বরাষ্ট্র ও ছাত্র উপদেষ্টাদের পদত্যাগ দাবি করেছে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদী। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেন তিনি।

হাদী বলেন, আজকে আমাদের কারও প্রতি কোনো দায়ও নেই, দরদও নেই। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আজকে দশ মাস পার হয়েছে। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে সরকারের রীতিমতো প্রসব বেদনা থাকার কথা ছিল। কিন্তু তা না করে তারা ফ্যাসিস্ট হাসিনার রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদকে রাতের আঁধারে ঢাকঢোল পিটিয়ে পরিবারসহ দেশত্যাগের সুযোগ করে দিয়েছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি প্রশ্ন রেখে হাদী বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানের দশ মাস পরে এসেও আমাদের বলতে হইতেছে, আপনারা কী করেন? আপনারা চুপ্পুকে (রাষ্ট্রপতি) অপসারণ করতে পারেন নাই, জুলাই ঘোষণাপত্র দিতে পারেন নাই, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করতে পারেন নাই, আপনারা ক্ষমতায় বসে করেনটা কী?’

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) গুরুত্বপূর্ণ ও আলোচিত নেতারা গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষোভ ঝেড়েছেন রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনের ওপর। বাংলাদেশ যুব অধিকার পরিষদ, গণ -অধিকার পরিষদের প্রতিবাদে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অভিমুখে যাত্রা কর্মসূচি পালন করেন। তারা স্মারকলিপিও দেন।

গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পতন হয় শেখ হাসিনা সরকার ও তার দল আওয়ামী লীগের। এরপর থেকেই আত্মগোপনে রয়েছেন দলটির নেতাকর্মীরা। অনেকে ইতিমধ্যে দেশ ছাড়লেও এতদিন দেশেই ছিলেন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। অবশেষে তিনিও গত বুধবার মধ্যরাতে দেশ ছেড়ে যান। এ সময় ছেলে ও শ্যালক তার সঙ্গে ছিলেন।

গত বুধবার রাত ৩টা ৫ মিনিটে তিনি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে থাইল্যান্ডের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন। বিমানবন্দর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্রটি জানিয়েছে, রাত ১১টার দিকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যান আবদুল হামিদ। এ সময় তার সঙ্গে ছেলে রিয়াদ আহমেদ ও শ্যালক ড. এএম নওশাদ ছিলেন। সেখানে যাওয়ার পর ইমিগ্রেশনে প্রয়োজনীয় যাচাই-বাছাই শেষে দেশ ছাড়ার সবুজ সংকেত পান সাবেক রাষ্ট্রপতি।

জানা গেছে, আবদুল হামিদের বিরুদ্ধে কোনো সংস্থার কাছে কোনো অভিযোগ ছিল না। রাত ৩টা ৫ মিনিটে থাই এয়ারওয়েজের টিজি ৩৪০ নম্বর ফ্লাইটে তারা তিন জন ব্যাংককের উদ্দেশে রওনা দেন।

আবদুল হামিদ আওয়ামী লীগের সময় ২০১৩ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত টানা দুই মেয়াদে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার আগে ২০০৯ থেকে ২০১৩ সালের এপ্রিল পর্যন্ত জাতীয় সংসদের স্পিকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

এদিকে সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের দেশত্যাগের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের শাস্তির আওতায় নিয়ে আসতে না পারলে নিজে চলে যাবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন কৃষি ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে দিনাজপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের এ কথা বলেন তিনি।

এর আগে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করার সময় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের গেটের সামনে বসে বিক্ষোভ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা।

বৈঠক থেকে বেরিয়ে তিনি ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন। সব আসামিদের ঘটনার পরে ধরা হচ্ছে শিক্ষার্থীদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঘটনার আগেও ধরা হচ্ছে ঘটনার পরেও ধরা হচ্ছে। আমি তো অস্বীকার করিনি। ঘটনার আগেও ধরা হচ্ছে ঘটনার দুদিন পরেও ধরা হচ্ছে। আমি এটা এখানে আসার পর জানতে পারছি। আমি সঙ্গে সঙ্গেই এটা নিয়ে কথা বলেছি।

যারা এই ঘটনায় জড়িত তাদের শুধু পদত্যাগ নয় তদন্ত করে তাদের শাস্তির আওতায় নিয়ে আসব। এটা নিয়ে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া উচিত কোনো অবস্থাতেই এটা ছাড় দেওয়া যাবে না। এ ঘটনায় জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন তিনি।

Scroll to Top