“আমি পরীক্ষার পড়াশোনা বুঝে নেওয়ার জন্য স্যারের কক্ষে যাই”

নিজ চেম্বারে ছাত্রীসহ ‘আপত্তিকর অবস্থায়’ ধরা পড়ার ঘটনার বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ফাইন্যান্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ হেদায়েত উল্লাহ। রোববার (১৮ মে) দুপুরে নগরীর একটি রেস্টুরেন্টে সাংবাদিকদের কাছে সেদিনের ঘটনা তুলে ধরেন তিনি।

অভিযুক্ত শিক্ষক মোহাম্মদ হেদায়েত উল্লাহ বলেন, গত ১১ মে আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের চেম্বারে এক নারী শিক্ষার্থী সাড়ে ৫টার দিকে পড়া বুঝিয়ে নেওয়ার জন্য আসে। হঠাৎ ৫টা ৪০ মিনিটের দিকে চারজন ছেলে আমার চেম্বারে আসে। এদের মধ্যে ছিল আইন বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী নাজমুস সাকিব। আরেকজন সিরাজুল ইসলাম সুমন যে নিজেকে সাংবাদিক বলে দাবি করে। আরেকজন আসে সাজ্জাদ হোসেন সজিব, সে কালবেলার প্রতিনিধি এবং মোহাম্মদ আতাউল্লাহ সে নিজেকে সমন্বয়ক বলে দাবি করে। তারা প্রথমেই আমার রুমে ঢুকে বিভিন্নভাবে ভয় দেখায় এবং অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করে। মেয়েটাকে শারীরিকভাবে হ্যারাস করা শুরু করে।

তিনি আরও বলেন, তারা সেখানে এসে বলে যে, এখানে আপত্তিকর ঘটনা ঘটছে এবং আমরা এটি এমনভাবে সোশ্যাল মিডিয়াতে ছাড়বো যে আপনার ক্যারিয়ার নষ্ট হয়ে যাবে এবং মেয়েটি ভবিষ্যতে তার মুখ দেখাতে পারবে না। তখন নাজমুস সাকিব আমাকে বলে যে, আপনি আমাদের এখনই ৫ লাখ টাকা দেবেন। তখন আমি বলি আমি এখন এত টাকা কোথায় থেকে দেব। তারপর তারা আমাকে বলে যে আপনি আমাদের এখন এক লাখ টাকা দেবেন এবং চার লাখ টাকা পরে দেবেন। তখন তাদের উত্তরে আমি বলি, আচ্ছা তাহলে এখন আমি আমার শিক্ষার্থীকে নিয়ে বের হয়ে যাই। কিন্তু তারা মেয়েটিকে তালা দিয়ে জিম্মি করে রাখে। নাজমুস সাকিব মেয়েটির সঙ্গে খারাপ কিছু করতে পারে- এই হুমকিও দেয়। তারা আমাদের ফোন রেখে দেয় তারপর আমি গিয়ে জুবেরি ভবন থেকে টাকা তুলে তাদের হাতে দেই।

প্রথম দিন সুমন এক লাখ টাকার সাথে আড়াই হাজার টাকা নেয় বলে অভিযোগ করে হেদায়েত উল্লাহ বলেন, পরের দিন ক্যাম্পাসে রবীন্দ্র ভবনের ৩য় তালায় এসে দুই লাখ টাকা নিয়ে যায়। তারপরও বুধবার দিবাগত রাতে আমাদের এই ভিডিও প্রকাশ করে হেয়প্রতিপন্ন করে। এভাবে তারা আমাকে ব্ল্যাকমেইল এবং চাঁদাবাজি করে আমার কাছে থেকে মোট তিন লাখ আড়াই হাজার টাকা নেয়। এরই মধ্যে নাজমুস সাকিব আমাকে বলে যে স্যার আপনাদের ফ্যাকাল্টির একজন শিক্ষক আছে যিনি আপনার পেছনে এই ইনফরমেশন আমাদের দিয়েছে। তার সাথে আপনার নিজেরও ভালো সম্পর্ক আছে এবং তার দুর্বলতাও যদি আপনি জানেন তাহলে আপনি তার কথা আমাদের বলবেন, আপনারও কমিশন চলে আসবে।

এদিকে ওই ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর শিক্ষক হেদায়েত উল্লাহর বহিষ্কার চেয়ে মানববন্ধন করেন ফাইন্যান্স বিভাগের শিক্ষার্থীরা। তারই পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল ওই নারী শিক্ষার্থী ও টাকা নেওয়ায় অভিযুক্ত দুই সাংবাদিক পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন করেন।

সংবাদ সম্মেলনে ওই নারী শিক্ষার্থী বলেন, কয়েকদিন পর আমার পরীক্ষা ছিল। তাই আমি পড়া বুঝতে স্যারের চেম্বারে যাই। সেখানে সকালে যাওয়ার কথা থাকলেও স্যার একটু ব্যস্ত থাকায় আমি বিকেলে গিয়েছিলাম। স্যারের কাছে পড়া বুঝতে বুঝতে সন্ধ্যা হয়ে যায়। এ সময় হঠাৎ কয়েকজন স্যারের চেম্বারে নক করে। পরে স্যার দরজা খুলে দেন। রুমে ঢুকে তারা প্রথমে আমার গায়ে হাত দিলে আমার গা থেকে ওড়না পড়ে যায়। তারা আমাকে ধর্ষণ করার হুমকি দেয়। তখন তারা মোবাইলে ভিডিও করার কথা বললে আমি টেবিলের তলে গিয়ে লুকাই। পরে তারা বের হওয়ার জন্য জোর করলে আমি গামছা মাথায় নিয়ে বের হই। তারা প্রথম ৫ লাখ টাকা দাবি করে। স্যার আমার নিরাপত্তার ভয়ে একপর্যায়ে টাকা দিতে রাজি হয় এবং চেম্বার থেকে বের হয়ে জুবেরী ভবনের দিক থেকে এক লাখ টাকা নিয়ে দেয়। পরেরদিন তাদের আরও দুই লাখ টাকা দিতে হয়।

তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে সংবাদ সম্মেলন করেন সাংবাদিক সাজ্জাদ ও সুমন।

সম্মেলন তারা বলেন, গত ১১ মে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে এক স্যারের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি, হেদায়েত উল্লাহ স্যার তার চেম্বারে এক ছাত্রীসহ অবস্থান করছেন। খবর পাওয়ার পর আমরা কয়েকজন শিক্ষার্থী প্রক্টর স্যারের অনুমতিক্রমে স্যারের চেম্বারের সামনে যাই। সেখানে গিয়ে দেখি, রুমের লাইট বন্ধ। আমরা নক করলে স্যার নিজেই দরজা খুলে দেন। তখন আমরা রুমে প্রবেশ করি এবং স্যারের সঙ্গে কথা বলার একপর্যায়ে টেবিলের নিচে ওই নারী শিক্ষার্থীকে লুকিয়ে থাকতে দেখি। পরে স্যার নিজেই ছাত্রীকে টেবিলের নিচ থেকে বের করে আনেন। এ সময় ছাত্রীটি অনুরোধ করে বলেন, যেন ভিডিও বা সংবাদ প্রকাশ না করা হয় অন্যথায় তিনি আত্মহত্যার মতো চরম সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। তাৎক্ষণিকভাবে আমরা প্রক্টর স্যারকে কল করি বিষয়টি জানানোর জন্য। পরে হেদায়েত উল্লাহ স্যারের অনুরোধে আমরা প্রক্টর স্যারকে আর ঘটনা খুলে বলিনি। এ সময় ওই শিক্ষার্থীর নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনা করে আমরা তখন ভিডিও প্রকাশ না করার সিদ্ধান্ত নিই।

জুবায়ের জিসান/আরএআর

Scroll to Top