২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে ছাত্র-জনতার নেতৃত্বে সংঘটিত গণঅভ্যুত্থানে তৎকালীন সরকারের পতনের পর দেশজুড়ে নেমে আসে এক ভয়াবহ আইন-শৃঙ্খলাহীনতার সময়। এই সংকটময় পরিস্থিতিতে নানা কুচক্রী মহলের তৎপরতায় দেশের বিভিন্ন স্থানে হামলা, অগ্নিসংযোগ, মব জাস্টিস, চুরি, ডাকাতি এবং রাজনৈতিক কর্মীদের উপর হামলার মতো ঘটনা বৃদ্ধি পায়। ফলে সাধারণ মানুষের মনে নিরাপত্তাহীনতার বোধ চরমে পৌঁছে।
এই অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে ঢাকাসহ দেশের প্রায় সকল সেনানিবাসে আশ্রয়ের জন্য উপস্থিত হন অনেক রাজনৈতিক ব্যক্তি, বিচারক, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, পুলিশ সদস্য এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার সাধারণ নাগরিক। সেনানিবাসগুলোতে আশ্রয়প্রার্থীদের প্রথম ও প্রধান বিবেচনায় ছিল জীবন রক্ষা, যা সেই সময় পরিচয় যাচাইয়ের চাইতেও অগ্রাধিকার পেয়েছিল।
কারা ছিলেন সেই আশ্রয়প্রার্থীদের তালিকায়?
মানবিক বিবেচনায় সেনানিবাসে যে ৬২৬ জনকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছিল, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যভাবে ছিলেন:
এই আশ্রয় প্রদান ছিল সম্পূর্ণরূপে সাময়িক এবং পরিস্থিতির উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে বেশিরভাগই এক বা দুই দিনের মধ্যে সেনানিবাস ত্যাগ করেন। তাছাড়া, যেসব ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ বা মামলা ছিল, তাদের মধ্য থেকে ৫ জনকে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিকট হস্তান্তর করা হয়।
২০২৪ সালের ১৮ আগস্ট তারিখে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক আনুষ্ঠানিক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে, যেখানে সেনানিবাসে আশ্রয়প্রাপ্তদের বিষয়টি পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করা হয়। একই দিনে, সেনানিবাসে আশ্রয় গ্রহণকারীদের মধ্যে ১৯৩ জনের একটি তালিকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়। তবে ৪৩২ জন সাধারণ পুলিশ সদস্য ও ১ জন এনএসআই সদস্যকে এ তালিকার বাইরে রাখা হয়েছিল।
আইএসপিআরের মতে, কিছু স্বার্থান্বেষী মহল উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তারা সেনানিবাসে আশ্রয়প্রাপ্তদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার মানবিক প্রচেষ্টাকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে।
আইএসপিআর থেকে দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সকল নাগরিককে বিভ্রান্তিমূলক অপপ্রচারে কান না দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। সেনাবাহিনী আবারও পুনর্ব্যক্ত করেছে যে, তারা দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় পেশাদারিত্ব, নিষ্ঠা ও আস্থার সাথে জাতির পাশে রয়েছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে।
প্রেস বিজ্ঞপ্তির সাথে সেনানিবাসে আশ্রয় নেওয়া সর্বমোট ৬২৬ জন ব্যক্তির পূর্ণাঙ্গ তালিকা সংযুক্ত করা হয়েছে। এই তালিকায় রয়েছে ৪৩২ জন সাধারণ পুলিশ সদস্য এবং ১ জন এনএসআই সদস্যও।