গত শতকে মানুষের অন্যতম আবিষ্কার ছিল উড়োজাহাজ। পাখির মতো মানুষেরও আকাশে ওড়ার স্বপ্ন পূরণ হলো। দেশ-বিদেশে যাতায়াত সহজ হয়। পাখি থেকে উদ্বুদ্ধ হয়েই উড়োজাহাজের আকার তৈরি। তবে পৃথিবীতে এমন কিছু উড়োজাহাজ রয়েছে, যা সরাসরি কোনো পাখির অনুকরণে নকশা করা।
অ্যালবাট্রস ওয়ান: ফ্রান্সের কোম্পানি এয়ারবাস এই বিমানটি নকশা করেছে। বিমানটি সামুদ্রিক পাখি অ্যালবাট্রস থেকে অনুপ্রাণিত। ২০১৯ সালে নকশা করা বিমানটি রিমোট নিয়ন্ত্রিত ছিল। অ্যালবাট্রস পাখির মতো বিমানটির সরু ডানা রয়েছে; যা আকাশে ওড়ার সময় বাতাসের সুবিধা নিতে পারে। অ্যালবাট্রস পাখি স্বল্প প্রচেষ্টায় বেশি দূরত্বে যেতে পারে। পাখিটির নাম থেকে বিমানটিরও নামকরণ হয়েছে অ্যালবাট্রস ওয়ান। পাখিটির মতো এ বিমানটিও কম শক্তি খরচ করে জ্বালানি বাঁচাতে পারে। তাছাড়া এর লম্বা ডানা অধিক ভারবহনে সহায়তা করে। সামুদ্রিক পাখি অ্যালবাট্রসেরও সরু লম্বা ডানা রয়েছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা তারা অনেক উঁচুতে ভাসতে পারে।
ফ্যালকন বি২ বোম্বার: শিকারি পাখি ফ্যালকন থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বি২ বোম্বার যুদ্ধবিমান। এই বিমানের গতি ঘণ্টায় ৬২৮ মাইল পর্যন্ত হতে পারে; যার ওজন ১ লাখ ৫৮ হাজার ১০০ পাউন্ড। শিকারি পাখি ফ্যালকন যেমন শিকার করে দ্রুত পালিয়ে যায়, এ বিমানটিও যুদ্ধক্ষেত্রে শত্রুপক্ষকে হামলা করে দ্রুত স্থান ত্যাগ করতে পারে। ফ্যালকন পাখির মতো এই বিমানেও সামনের দিকে সরু এবং ডানাগুলো ছড়িয়ে আছে, যার ফলে আকাশে ওড়ার সময় ফ্যালকন পাখির মতো সুবিধা পায় এ বিমানটি।
মেটা বার্ড: চঞ্চল এবং দুরন্ত চড়ুই পাখি আমাদের অতি পরিচিত। সেই পাখির মতো ড্রোন তৈরি করেছে বায়োনিক বার্ড। পাখির মতো ডানা ঝাপটিয়ে উড়ে বেড়াবে ড্রোনটি। দেখতে অনেকটা পায়রার মতো। ড্রোনটি স্মার্টফোন দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করে উড়ানো যাবে। বায়োনিক বার্ড কোম্পানি দশ বছর ধরে এমন ড্রোন নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত। খেলনার মতো ড্রোনটি চার্জ দেওয়ার পর ৮ মিনিটের মতো উড়তে পারে।
এয়ারবাস বার্ড অব প্রে: শিকারি পাখি ঈগল থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছে বার্ড অব প্রে বিমানের নকশা। এর ডানার নকশাগুলো ঈগলের মতোই। ২০১৯ সালে উন্মোচন হওয়া বিমানটি ফ্রান্সের এয়ারবাস কোম্পানি নকশা করে। যুক্তরাজ্যে রয়্যাল ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্যাটু এয়ার শোতে প্রকাশিত বিমানের নকশাটি আঞ্চলিক বিমান পরিবহনের জন্য একটি হাইব্রিড-ইলেকট্রিক টার্বো-প্রপেলার বিমান। বিমানটিতে ঈগলের মতো ডানা এবং লেজ দেওয়া হয়েছে। বিমানটির নকশাকারকরা বলছেন, এটি বায়োমিমিক্রি অর্থাৎ প্রকৃতি দ্বারা অনুপ্রাণিত নকশা। বিমানটির ঈগলের মতো ডানা বাতাসের দমকা হাওয়ায় কাজে দেবে বলে জানান প্রকৌশলীরা। তাছাড়া গতি বাড়ানোর ক্ষেত্রেও ডানাগুলো ভূমিকা রাখবে।