শরম দিয়া অইবে কি, স্বামীর প্রয়োজনে পাশে না থাকলে কেমন ভালোবাসা

ভালোবাসা—এই শব্দটির সঙ্গে ছোট-বড় সবাই কমবেশি পরিচিত। ভালোবাসা এমন একটি অনুভূতি যা পূর্বঘোষণা দিয়ে আসে না, আবার কখন ছিন্ন হয়ে যায় তাও টের পাওয়া যায় না। এমনই একটি ভালোবাসার ব্যতিক্রম উদাহরণ তৈরি করেছেন বরগুনার পাথরঘাটার তাসলিমা বেগম।

পঞ্চাশের কোঠায় থাকা জলিল হাওলাদার ও তার স্ত্রী তাসলিমা বেগমের সংসার চলছিলো শান্তিতে। তাদের এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। সন্তানদের নিয়ে ভবিষ্যৎ নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল তাদের। কিন্তু একটি দুর্ঘটনা সবকিছু ওলটপালট করে দেয়।

স্বামীর দুর্ঘটনা বদলে দিল জীবন
জলিল হাওলাদার বরগুনার বেতাগী উপজেলার উত্তর চান্দুখালি এলাকার বাসিন্দা। তিনি ঢাকার শাহবাগে একটি বহুতল ভবনের নির্মাণকাজ করতেন। আট বছর আগে কাজ করতে গিয়ে তিনি দোতলা থেকে পড়ে গিয়ে মারাত্মকভাবে আহত হন। তার মেরুদণ্ড ভেঙে যায় এবং তখন থেকেই তিনি শয্যাশায়ী।

জীবনের কঠিনতম এই সময় শুরু হয় তখন থেকেই। সংসারে নেমে আসে অভাব-অনটন। ছেলে-মেয়ের পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়, তিন বেলার খাবার এক বেলাও জোটে না। সেই থেকেই সংসারের হাল ধরেন তাসলিমা বেগম।

স্ত্রী চালাচ্ছেন ভ্যান, ভিক্ষা করে জোগান চিকিৎসার খরচ
২০২১ সালে বরগুনার পাথরঘাটার পৌর শহরের উকিল পট্টিতে বোরকা পরা এক নারীকে ভ্যান ঠেলতে দেখা যায়। পথচারীরা এই দৃশ্য দেখে অবাক হন। প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হলে জানা যায়, তিনিই জলিল হাওলাদারের স্ত্রী তাসলিমা।

তিনি বলেন, “স্বামী যখন ভালো ছিলেন, তখন আমাকেও খাওয়াতেন। এখন যখন তিনি অসুস্থ, তখন আমি চেষ্টা করছি কিছু উপার্জনের। প্যাডে ভাত না থাকলে শরম দিয়ে কী হবে?”

তিনি আরও বলেন, “এতটুকু যদি স্বামীর জন্য করতে না পারি, তাহলে কেমন ভালোবাসা? স্বামীর প্রতি স্ত্রীর প্রেমের প্রমাণ এভাবেই দিতে চাই।”

চিকিৎসার খরচ জোগাতে হিমশিম
আব্দুল জলিল জানান, তার মেরুদণ্ডে এখন টিউমার হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে ব্যথায় ভুগছেন। চিকিৎসকরা বলছেন, দ্রুত অপারেশন করাতে হবে। কিন্তু অর্থের অভাবে তা সম্ভব হচ্ছে না।

তিনি বলেন, “যখন ভালো ছিলাম, তখন সংসার খুব ভালো চলতো। আজ আমি পঙ্গু। চিকিৎসার টাকাও নেই। তবু আশা ছাড়িনি।”

প্রশাসনের মানবিক উদ্যোগের ইঙ্গিত
এ বিষয়ে পাথরঘাটা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাবরিনা সুলতানা বলেন, “স্বামীর চিকিৎসা ও সংসার চালানোর জন্য একজন নারী ভ্যান চালাচ্ছেন, এটি অত্যন্ত সাহসিকতার উদাহরণ। যদি এ পরিবার কোনো সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় না থাকে, তবে আমরা উদ্যোগ নেব তাদের সহায়তার জন্য।”

তাসলিমা বেগমের এই সাহস, ত্যাগ ও ভালোবাসার গল্প শুধুই একটি মানবিক ঘটনা নয়—এটি আজকের সমাজে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। যেখানে অনেকেই দুঃসময়ে সঙ্গীকে ছেড়ে চলে যান, সেখানে তিনি নিজের হাতে ভ্যান ঠেলে স্বামীর পাশে দাঁড়িয়ে আছেন। এমন ভালোবাসা সমাজে বারবার দরকার।

Scroll to Top