যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের হাডসন নদীতে পর্যটকদের বহনকারী একটি হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে তিন শিশুসহ ছয়জন নিহত হয়েছেন। হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে প্রযুক্তি জায়ান্ট সিমেন্সের স্প্যানিশ শাখার সভাপতি এবং স্ত্রী-সন্তানসহ তার পরিবারের আরও চার সদস্য রয়েছেন বলে জানা গেছে।
নিউইয়র্ক সিটির লোয়ার ম্যানহাটনের কাছে হাডসন নদীতে স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার বিকেলে পর্যটকবাহী ওই হেলিকপ্টার বিধ্বস্তে প্রাণহানির এই ঘটনা ঘটে। শুক্রবার (১১ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম দ্য মিরর।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, নিউইয়র্ক সিটিতে ভয়াবহ হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় স্পেনের প্রযুক্তি জায়ান্ট সিমেন্স-এর স্প্যানিশ শাখার প্রেসিডেন্ট অগাস্টিন এসকোবার ও তার পরিবার প্রাণ হারিয়েছেন। নিহতদের মধ্যে তার স্ত্রী এবং তিন সন্তানও রয়েছেন— যারা একসঙ্গে ভ্রমণে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টা ১৫ মিনিটে হেলিকপ্টারটি হাডসন নদীর ওপরে ভেঙে পড়ে এবং উল্টে গিয়ে পানিতে আছড়ে পড়ে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হেলিকপ্টারটি আকাশেই “দুই টুকরো” হয়ে যায়। অনেকে এমনকি একটি “সনিক বুম”-এর মতো শব্দও শুনেছেন, যা হেলিকপ্টারটি ভেঙে পড়ার আগমুহূর্তে হয়ে থাকে।
দুর্ঘটনার শিকার হেলিকপ্টারটি “নিউইয়ক হেলিকপ্টার” নামের একটি কোম্পানির পরিচালিত ভ্রমণ-সেবার অংশ ছিল। এই কোম্পানি নিউইয়র্ক শহরের ওপর দিয়ে ঘুরিয়ে দেখানোর জন্য পর্যটকদের হেলিকপ্টার ট্যুর করিয়ে থাকে।
অগাস্টিন এসকোবার পরিবার নিয়ে বার্সেলোনা থেকে নিউইয়র্কে এসেছিলেন বৃহস্পতিবার সকালে। হেলিপ্যাডে এবং হেলিকপ্টারের ভেতরে পরিবারের তোলা হাসিমাখা ছবি এখন রীতিমতো হৃদয়বিদারক হয়ে উঠেছে।
সিমেন্স স্পেন-এর সিইও হিসেবে অগাস্টিন এসকোবার ২০২২ সালে নিয়োগ পান। এর আগে তিনি সিমেন্স মবিলিটি স্পেন-এর প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৯৮ থেকে ২০১০ পর্যন্ত স্পেনে জ্বালানি ও পরিবহন খাতে গুরুত্বপূর্ণ নানা পদে ছিলেন এবং জার্মান চেম্বার অব কমার্স ফর স্পেন-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
হেলিকপ্টার কোম্পানির সিইও মাইকেল রথ বলেন, “আমি সম্পূর্ণভাবে বিধ্বস্ত। ভিডিও দেখে যা বুঝেছি, হেলিকপ্টারের প্রধান রটার ব্লেডগুলো উধাও ছিল, যেটা আমার ৩০ বছরের ক্যারিয়ারে কখনোই দেখিনি।”
হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে চিলির সাবেক প্রেসিডেন্ট নিহত
নিউইয়র্কের গভর্নর ক্যাথি হোকুল এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় শোক প্রকাশ করে বলেন, “ছয়জন নির্দোষ মানুষের প্রাণ গেছে। আমরা তাদের ও তাদের পরিবারের জন্য প্রার্থনা করছি।”
তিনি আরও জানান, তদন্তকারী দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে কাজ শুরু করেছে এবং দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান চলছে।
এদিকে এই ঘটনা আবারও প্রশ্ন তুলছে হেলিকপ্টার ট্যুরের নিরাপত্তা এবং রক্ষণাবেক্ষণের মান নিয়ে। নিউইয়র্কের মতো ব্যস্ত শহরের আকাশে এমন পর্যটন হেলিকপ্টার চলাচল কতটা নিরাপদ— সেই বিতর্ক নতুন করে সামনে এসেছে।