বাংলাদেশের জন্য সৃষ্টিকর্তা আশির্বাদ করে পাঠিয়েছেন শত শত নদ-নদীকে। আর বাংলাদেশের প্রতিবেশি ভারত সেসব আশির্বাদের গলা চেপে ধরে একের পর এক বাঁধ বসিয়েছে আন্তঃসীমান্ত বাঁধগুলোর উপর। ভারত যেসব বাঁধ দিয়েছে তার মধ্যে ফারাক্কা বাঁধ এক বড় অভিশাপ এই অঞ্চলের মানুষের জন্য। বিগত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশকে প্রতি নিয়তই বন্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। যার পেছনে একটি বড় কারণ ফারাক্কা বাঁধ। ভারতের ফারাক্কা বাঁধের গেইট খোলার পর বাংলাদেশে বন্যার পরিস্থিতি একটা নতুন মাত্রা ধারণ করেছে।
ফারাক্কা বাঁধ গঙ্গা নদীর উপর নির্মিত একটি অভ্যন্তরীণ জলবায়ু প্রকল্প। যা বাংলাদেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি করছে প্রতি বছর। এই ফারাক্কা বাঁধ নিয়ে ভারতের স্বেচ্ছাচারিতার শেষ নেই। এবার ভারতের ফারাক্কা নিয়ে ভারতের দাদাগিরির দিন শেষ হতে চলেছে। বাংলাদেশ সরকার ভারতের ফারাক্কার ভাটিতে পদ্মা নদীর ২৫ কিলোমিটার নদী ভাঙন কবলিত এলাকায় বাঁধ নির্মাণের জন্য একটি বড় প্রকল্প গ্রহণ করেছে।
পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. আ ন ম বজলুর রশিদ বৃহস্পতিবার চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার দুর্লভ ইউনিয়নের দোভাগীর ছাইল পাড়া গ্রামে নদী পরিদর্শন শেষে এ প্রকল্পের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানান। বেশ কয়েক বছর ধরে ভারতীয় সীমান্তবর্তী এই এলাকায় পদ্মা নদী ভয়াবহ নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। যার ফলে ফসলি জমি, বসত বাড়ি এবং স্থানীয় জনগণের জীবনযাত্রায় ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।
এই ২৫ কিলোমিটার এলাকাটি এখনও চরম বিপদাপন্ন। এদিকে নদী রক্ষা এবং ভাঙন রোধে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটির প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১৭০০ কোটি টাকা। বাঁধ নির্মাণের ফলে এই এলাকাটি নিরাপদ হবে এবং আর কোনো পাড় বাঁধের প্রয়োজন হবে না। এতে নদী ভাঙন রোধের মাধ্যমে ফসলি জমি ও বসত বাড়ি রক্ষা করা সম্ভব হবে বলে জানানো হয়। ড. আ ন ম বজলুর রশিদ আরও বলেন প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই সম্পন্ন হয়েছে এবং আগামী দিনগুলোতে বাস্তবায়নের কাজ শুরু হবে।
ফারাক্কা বাঁধের কারণে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে জলবন্টন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলেছে। ১৯৯৬ সালে দুই দেশের মধ্যে গঙ্গা পানি বন্টন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও সমস্যার সম্পূর্ণ সমাধান হয়নি। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ যখন বাঁধের গেইট খোলার সিদ্ধান্ত নেয়, তখন কোনো মতামত নেয়া হয় না। যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে।