সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে জুলাই ও আগস্টে সংঘটিত গণহত্যার ঘটনায় চলতি এপ্রিল মাসেই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চার্জশিট দাখিল করা হবে বলে জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
জার্মানভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলেকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তাজুল ইসলাম জানান, জুলাই ও আগস্ট গণহত্যা সংক্রান্ত তিনটি মামলার তদন্ত ইতোমধ্যেই চূড়ান্ত হয়েছে। তিনি বলেন, “এর মধ্যে প্রথমে ট্রাইব্যুনালে দাখিল করা হবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় আশুলিয়ায় থানার সামনে ভ্যান গাড়িতে ছয়জনের মরদেহ পুড়িয়ে হত্যার তদন্ত রিপোর্ট। এরপর রাজধানীর চানখাঁরপুলে হত্যাকাণ্ডের তদন্ত রিপোর্ট জমা দেওয়া হবে।”
তবে সবচেয়ে গুরুত্ব পাচ্ছে তৃতীয় তদন্ত রিপোর্ট, যেখানে সরাসরি শেখ হাসিনাকে অভিযুক্ত করা হচ্ছে। প্রসিকিউটর জানান, “এই রিপোর্টটি পৃথকভাবে তৈরি করা হচ্ছে। এতে শেখ হাসিনাকে সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটি বা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দায়ের আওতায় গণহত্যার জন্য অভিযুক্ত করা হবে।”
তিনি আরও বলেন, “সব কটি মামলায় শেখ হাসিনাকে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে না। একটি নির্দিষ্ট মামলায় তার বিরুদ্ধে সব অভিযোগ উপস্থাপন করা হবে। আমরা অভিযোগ প্রমাণের পর্যাপ্ত সাক্ষ্য-প্রমাণ পেয়েছি এবং এসব অকাট্য প্রমাণে তার বিরুদ্ধে একাধিকবার অভিযোগ প্রমাণ করা সম্ভব।”
শেখ হাসিনাই কি এই মামলার একমাত্র আসামি হবেন, এমন প্রশ্নে চিফ প্রসিকিউটর জানান, “এখনো এটি চূড়ান্ত হয়নি। তবে শেখ হাসিনা একাই আসামি হতে পারেন অথবা তার কমান্ড অনুযায়ী হত্যাকাণ্ডে অংশগ্রহণকারী সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন এবং সাবেক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও মামলার আসামি হতে পারেন।”
তিনি আরও জানান, চার্জশিট দাখিলের প্রাথমিক রিপোর্ট ইতোমধ্যে তাদের হাতে এসেছে এবং তা যাচাই-বাছাই চলছে। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, “এক সপ্তাহ বা দুই সপ্তাহের মধ্যেই তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করা সম্ভব হবে, অর্থাৎ এ মাসেই তা ট্রাইব্যুনালে জমা দেওয়া হবে।”
উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর জুলাই মাসে সংঘটিত অভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে সারা দেশে প্রায় দেড় হাজার মামলা হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৬০০টি মামলা শুধুমাত্র হত্যার অভিযোগে করা হয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মোট ৩২৪টি মামলা দায়ের হয়েছে, যার মধ্যে ঢাকাতেই রয়েছে ২৯৭টি এবং ঢাকার বাইরে ২৭টি।
তথ্যসূত্র: কালের কণ্ঠ