পাকিস্তান ক্ষমা চাইছে, চীন অস্ত্র দিচ্ছে কূটনৈতির মঞ্চে খেলা দেখাচ্ছে

গত দেড় দশকের ভারত-ঘনিষ্ঠ অবস্থান থেকে সরে এসে বাংলাদেশ এখন দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে একটি স্বাধীন ও কৌশলগত শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্বে ঢাকার বহুমুখী পররাষ্ট্রনীতি নয়া দিল্লি থেকে ইসলামাবাদ, বেইজিং থেকে ওয়াশিংটন পর্যন্ত আঞ্চলিক শক্তিগুলোর মধ্যে নতুন সমীকরণ তৈরি করছে।

ভারতের “বিশ্বস্ত প্রতিবেশী” তত্ত্ব এখন ঢাকায় তেমন গুরুত্ব পাচ্ছে না। অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্বে বাংলাদেশ পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার উদ্যোগ নিয়েছে, তবে ১৯৭১-এর যুদ্ধাপরাধ ও গণহত্যার জন্য ক্ষমা ও ক্ষতিপূরণ দাবি করে রেখেছে। এছাড়া, সীমান্ত বিরোধ, এনআরসি, সিএএ এবং তিস্তা চুক্তি ইস্যুতে বাংলাদেশে ভারতবিরোধী জনমত তীব্র হচ্ছে।

বাংলাদেশের ৭০% সামরিক সরঞ্জাম এখন চীন থেকে আসে, যার মধ্যে রয়েছে রাডার সিস্টেম, মিসাইল এবং যুদ্ধজাহাজ। স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (SIPRI) তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ-চীন সামরিক সহযোগিতা ভারতের জন্য কৌশলগত উদ্বেগ তৈরি করেছে। চীনের পাশাপাশি রাশিয়া ও সৌদি আরবের সঙ্গেও ঢাকার সম্পর্ক গভীর হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে ইন্ডিয়ান ওশেন সিকিউরিটি পার্টনার হিসেবে দেখতে চায়। সৌদি আরবের অর্থনৈতিক জোন প্রতিষ্ঠা এবং রাশিয়ার সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা ভারতের একচেটিয়া আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ করছে।

১৯৭১-এর অমীমাংসিত ইস্যু নিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক আলোচনা শুরু করেছে বাংলাদেশ। ক্ষমা ও ক্ষতিপূরণের শর্তে ইসলামাবাদের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে আগ্রহ দেখাচ্ছে ঢাকা, যা ভারতের জন্য বড় ধরনের কূটনৈতিক চাপ তৈরি করতে পারে।

অর্থনৈতিকভাবে ছোট হলেও কৌশলগতভাবে বাংলাদেশ এখন দক্ষিণ এশিয়া, চীন, মধ্য এশিয়া এবং পশ্চিমা জোটগুলোর মধ্যে সংযোগস্থল হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে। বিশ্লেষকদের মতে, দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের একচেটিয়া প্রভাব কমতে শুরু করেছে, কিন্তু এই পরিবর্তনের সুফল পেতে বাংলাদেশকে সতর্ক ও কৌশলী হতে হবে।

বাংলাদেশের এই নতুন ভূরাজনৈতিক অবস্থান দক্ষিণ এশিয়ায় শক্তির ভারসাম্য বদলে দিতে পারে। তবে, চীন-মার্কিন দ্বন্দ্ব, ভারত-পাকিস্তান বৈরিতা এবং অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার বিষয়গুলো ঢাকাকে সাবধানে পরিচালনা করতে হবে।

Scroll to Top