প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম পারভেজকে ছুরিকাঘাতে হত্যার ঘটনায় উত্তাল হয়ে উঠেছে শিক্ষাঙ্গন। অভিযোগ, দুই নারী শিক্ষার্থীকে দেখে হাসাহাসি করার জেরে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে। তবে প্রশ্ন উঠেছে, শুধু হাসির কারণেই কি একজনকে হত্যা করা যায়, নাকি এর পেছনে কোনো গভীর রহস্য লুকিয়ে আছে?
১৯ এপ্রিল বিকেলে পরীক্ষা শেষে বনানীর একটি দোকানে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিলেন পারভেজ। হঠাৎ পাশের দোকানে দুজন নারী শিক্ষার্থীকে দেখে তিনি হাসেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে নারী শিক্ষার্থীরা তাদের বন্ধুদের ডেকে আনে। কথাকাটাকাটি ও উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে পারভেজকে ছুরিকাঘাত করা হয়।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, পারভেজের সঙ্গে আগে থেকে কারও শত্রুতা ছিল না। নারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাঁর কোনো অসৌজন্যমূলক আচরণের অভিযোগও বিশ্বাসযোগ্য নয়। এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, “পারভেজ ভাইয়ের ক্ষেত্রে ইভটিজিংয়ের কথা মানানসই নয়। ওই তিনজন ছেলে নতুন ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থী, তারা স্থানীয় দাপট দেখাতে গিয়েই এই ঘটনা ঘটিয়েছে।”
ঘটনার পর প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টোরিয়াল বডি হস্তক্ষেপ করে। পারভেজ দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চাইলেও তা শেষ রক্ষা করতে পারেনি। প্রক্টর অফিসে নারী শিক্ষার্থীদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পারভেজকে ক্ষমা চাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু তা সত্ত্বেও হামলাকারীরা রুখে দাঁড়ায়নি।
তদন্তে জানা গেছে, নারী শিক্ষার্থীরা বনানীর ইউনিভার্সিটি অফ স্কলারসের শিক্ষার্থী। একজন ফাতেমা তাহসিন ঐশী (বিবিএ), অন্যজন ফারিয়া হক টিনা (ইংরেজি বিভাগ)। পারভেজ হত্যার পর থেকে তারা ক্যাম্পাসে অনুপস্থিত এবং তাদের ফোন বন্ধ রয়েছে। ইউনিভার্সিটি অফ স্কলারস কর্তৃপক্ষ তাদের সাময়িক বহিষ্কার করেছে এবং তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের ক্যাম্পাসে প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে।
পারভেজ হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে ইতিমধ্যে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের মাহাতীর নিয়াজ তোষা, এলএলবি বিভাগের পিয়াস ও বিবিএর মেহরাজ উল্লেখযোগ্য। এছাড়া স্থানীয় কিছু যুবকও হামলায় জড়িত ছিল। পুলিশ জানিয়েছে, নারী শিক্ষার্থীদের বন্ধু পিয়াস ঐশীর প্রেমিক, এবং তারা সবাই বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী।
পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, “যারা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” পারভেজের সহপাঠী ও শিক্ষকরা দ্রুত সকল আসামিকে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন।
ঘটনার দিনের সিসি ক্যামেরা ফুটেজ বিশ্লেষণ করে আরও কয়েকজন সন্দেহভাজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। পুলিশ বলছে, তদন্ত দ্রুত এগিয়ে চলেছে এবং বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
এই হত্যাকাণ্ড শিক্ষাঙ্গনে নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলার প্রশ্ন তুলে ধরেছে। পারভেজের পরিবার ও সহপাঠীরা ন্যায়বিচারের দাবিতে সোচ্চার। ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়া সবার নজরে রয়েছে।