ঢাকার সাভারে বাবাকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অচেতন করে ছুরি মেরে হত্যা করে এক তরুণী। হত্যার সময় নিজের ফোনে ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আপলোড করে ওই তরুণী। পরে নিজেই ফোন করেন জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে। তখন তিনি বলেন, `আমি বাবাকে খুন করেছি, আমাকে ধরে নিয়ে যান।’
বৃহস্পতিবার (৯ মে) ভোরে ভাড়া বাসা থেকে ওই জান্নাতুল জাহান শিফা (২৩) নামে এক তরুণীকে আটক করে পুলিশ। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ওই ভিডিওটি ভাইরাল হয়।
ওই ভিডিওটিতে দেখা যায়, ওই তরুণী ছুরিরঘাতে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে যাচ্ছে একটি মৃত ব্যক্তিকে। এবং ভিডিওতে থাকা মেয়েটিকে দাবি করতে দেখা যায় মৃত ব্যক্তিটি তার বাবা, একাধিকবার তাকে ধর্ষণ করা হয়েছে দাবি করে একের পর এক মৃত ব্যক্তির শরীরের ছুরিরঘাত করতে থাকে। সে ধর্ষণের অভিযোগ নিয়ে একাধিকবার পুলিশের কাছে গিয়েও কোনো প্রতিকার পায়নি বলে জানান ভিডিওতে।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার হওয়া ভিডিওটির বিষয়ে নিশ্চিত করে সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ জুয়েল মিঞা দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, মেয়েটির মোবাইলে হত্যাকাণ্ডের ভিডিও পাওয়া গেছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে স্বীকার করেছে, সর্বপ্রথম সে তার বাবাকে খুন করে, এরপর সেই ঘটনাটি ভিডিও করে ফেসবুকে আপলোড দেয় এবং পরে নিজেই জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন করে বিষয়টি জানায়।
স্থানীয়সূত্রে জানা যায়, নিহত আব্দুর সাত্তার (৫৫) নাটোর জেলার সিংড়া থানার ভগা গ্রামের বাসিন্দা। তিনি সাভার পৌরসভার মজিদপুর কাঠালবাগান এলাকায় একটি ফ্ল্যাটে থাকতেন। তরুণীর মা তার তৃতীয় স্ত্রী ছিলেন। পাঁচ বছর বয়সে তরুণীর মা মারা যান। চলতি বছরের শুরুর দিকে ওই বাসায় আসেন মেয়েটি।
ওই বাড়িটির কেয়ারটেকার রহিজ উদ্দিন বলেন, গত ৫ মাস আগে বাবা ও মেয়ে পাঁচ তলার ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে থাকতে শুরু করে। তবে তাদের ফ্ল্যাটে কী হয় না হয় আমরা কিছুই জানি না।
আটক হওয়ার পর ঘটনার বর্ণনায় ওই তরুণী বলেন, ২০২২ সালে নাটোরের সিংড়া থানায় তার বাবার বিরুদ্ধে মামলা করেন তিনি। ওই মামলায় সাত্তার দীর্ঘদিন কারাগারে ছিলেন। জামিনে বের হয়ে আবার মেয়ের সঙ্গে থাকতে শুরু করেন। তবে ওই মামলার জেরে বাবা-মেয়ের মধ্যে বনিবনা হচ্ছিল না। মেয়েকে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য বিভিন্নভাবে চাপও দিচ্ছিলেন সাত্তার।
তিনি আরও বলেন, ‘এর জেরে বুধবার রাতে ভাতের সঙ্গে ২০টি ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে বাবাকে খেতে দেয় জান্নাত। পরে তিনি ঘুমিয়ে পড়লে ভোরের দিকে ধারালো ছুরি দিয়ে তাকে কুপিয়ে হত্যা করে। পরে জরুরি সেবা নম্বরে ফোন করে হত্যার বিষয়টি জানায়।’
এদিকে পুলিশ জানায় ভোররাত ৪টার দিকে এক নারী জাতীয় জরুরি সেবা-৯৯৯ নম্বরে ফোন করে বলেন যে, আমি আমার বাবাকে হত্যা করেছি। আমাকে ধরে নিয়ে যান। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে আব্দুর সাত্তারের লাশ উদ্ধার করে এবং মেয়ে জান্নাতকে গ্রেপ্তার করে। পরে মৃতদেহ উদ্ধার করে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।
যদিও সিংড়া থানায় মামলার বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত করতে পারেননি ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ রফিকুল ইসলাম। তিনি দ্য ডেইলি ক্যাম্পাসকে জানান, ২০২২ সালে আমাদের থানায় কোন ধর্ষণ মামলা আছে কি না আমরা তা যাচাই-বাচাই করছি। তবে তার বাবার বিরুদ্ধে ঢাকার মোহাম্মদপুর থানায় একটি মামলা দেখা যাচ্ছে প্রতারণার।