হাসিনাকে ফোন করে যে দুঃসংবাদ দিলেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী!

বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর এবার মুখ খুললেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। সংসদীয় কমিটির বৈঠকে তিনি স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছেন, “হ্যাঁ, আমরা জানতাম হাসিনার সরকার টিকবে না। তবে কিছু করার ছিল না। পরিস্থিতি আমাদের হাতের বাইরে চলে গিয়েছিল।”

এই বক্তব্যের ঠিক আগে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ঘোষণা করেছে, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি)-তে তোলা হবে। এই ঘোষণার পরই দিল্লির প্রশাসনিক মহলে দেখা দিয়েছে তীব্র অস্বস্তি।

ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর শীর্ষ কর্মকর্তা রমনশ্রান্ত আগারওয়ালের মতে, “আমরা হাসিনাকে পরামর্শ দিয়েছিলাম, গুলি চালাবেন না। কিন্তু তিনি আমাদের পরামর্শ শুনলেন না। তার বদলে গুলি চালানোর সিদ্ধান্ত নিলেন। এরপর মোদি নিজে বিষয়টি নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার চেষ্টা করেন।”

জয়শঙ্করের ভাষ্যও ছিল একই সুরে—“আমরা পরিস্থিতি সামাল দিতে চেয়েছিলাম, কিন্তু হাসিনা সরকার তখন এমন জায়গায় পৌঁছে গিয়েছিল, যেখানে কেউই তাঁকে বাঁচাতে পারত না। মোদি তবু চেষ্টা করেছিলেন।”

বর্তমানে শেখ হাসিনা দিল্লির এক গেস্ট হাউজে ‘বিশেষ অতিথি’ মর্যাদায় অবস্থান করছেন। তবে সূত্র বলছে, সেই মর্যাদাও ধীরে ধীরে প্রত্যাহার করা হচ্ছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র জানিয়েছে, “প্রথম দিকে তাকে নানা সুবিধা দেওয়া হলেও, এখন নিজের রান্না করে খেতে হয়। প্রায়ই দুধ-মুড়ি খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন তিনি। অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ নিয়ে তিনি উৎকণ্ঠায় আছেন।”

গেস্ট হাউজের নিরাপত্তা ব্যবস্থাপক জয়রাজ মালহোত্রার দাবি, হাসিনা সম্প্রতি জয়শঙ্করকে ফোন করে দেশে ফেরার জন্য চাপ দেন। উত্তরে জয়শঙ্কর বলেই ফেলেন, “ম্যাডাম, আপনি যদি দেশের মানুষের কথা শুনতেন, তাহলে এমন দুধ-মুড়ি খেয়ে জীবন কাটাতে হতো না। আপনি দেশেই থাকতেন। এখন আলোচনা চলছে আইসিসিতে পাঠানোর টিকিট কাটা নিয়ে।”

‘ট্রু জাস্টিজ’ নামে মুম্বাইভিত্তিক একটি স্বাধীন তদন্ত সংস্থার মুখপাত্র জানিয়েছেন, “শেখ হাসিনার সকল বিতর্কিত কাজে ভারত পাশে ছিল। ফলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায় ভারতও এড়াতে পারে না।” তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশ যদি শক্ত অবস্থান নেয়, তবে ভারতকেও আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হতে পারে।”

তবে জয়শঙ্কর স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, “আমরা কোনোভাবেই আইসিসি-তে যাব না। হাসিনার সাথে হেগে যাওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়।” অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বলেন, “২০২২ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী মোদির ৩৮টি বিদেশ সফরে মোট ২৫৮ কোটি রুপি খরচ হয়েছে। আইসিসিতে অংশগ্রহণ করতে হলে প্রতি বার ১২ থেকে ১৫ কোটি রুপি ব্যয় হবে, যা প্রধানমন্ত্রীর বিদেশ ভ্রমণ বাজেটের সঙ্গে সমন্বয় করা সম্ভব নয়। তাছাড়া মোদি বেড়াতে ভালবাসেন, তবে আদালতে নয়।”

মানবাধিকার সংস্থাগুলোর দাবি, “আইসিসি যদি সত্যিই সক্রিয় হয়, তবে শেখ হাসিনার বাসস্থান দিল্লির গেস্টহাউস নয়, হেগের ট্রাইব্যুনাল হবে।” অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী মোদি এখনো এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।

ভারতের জন্য এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে—তারা কীভাবে এই কূটনৈতিক সংকট সামাল দেবে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজেদের অবস্থান ধরে রাখবে।

তথ্যসূত্র: ইন্ডিয়ান সংবাদদাতা

Scroll to Top