“পালাবো না, কোথায়ই বা পালাবো? দরকার হলে ফখরুল সাহেবের বাসায় গিয়েই আশ্রয় নেব!” — এমনই ব্যঙ্গাত্মক সুরে আওয়ামী লীগের একজন নেতা মন্তব্য করলেন সাম্প্রতিক রাজনৈতিক উত্তাপ নিয়ে।
রাজধানীর অলিগলিতে যেখানে আগে মাঝেমধ্যে মধ্যরাতে কিংবা ভোরের আলো ফোটার আগেই দেখা যেত ঝটিকা মিছিল, এখন তা যেন রূপ নিয়েছে খোলাখুলি শোডাউনে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আওয়ামী লীগ আবারও রাজপথে সক্রিয় হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্তমানে ভারতে, দলের একাধিক প্রভাবশালী নেতা রয়েছেন কারাগারে এবং অনেকে পলাতক — তা সত্ত্বেও দলের মাঠে থাকার প্রত্যয় স্পষ্ট।
প্রতিদিনই দেখা যাচ্ছে আকস্মিক মিছিল—ঝটিকা স্টাইলে। তবে এবার সেই কৌশলে পরিবর্তন এসেছে। দলীয় সূত্র এবং গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, মে ও জুন মাসকে সামনে রেখে বড় পরিসরে রাজপথ ‘দখলের’ ছক কষছে আওয়ামী লীগ ও তাদের অঙ্গসংগঠনগুলো, এমনকি নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগও।
সূত্র জানিয়েছে, সম্প্রতি ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের একটি টেলিগ্রাম গ্রুপে চার ঘণ্টার দীর্ঘ বৈঠক করেছেন গাজীপুরের সাবেক মেয়র মো. জাহাঙ্গীর আলম। এতে দেশের জেলা-উপজেলার নেতাকর্মীদের নিয়ে জুম মিটিং হয়, যেখানে রাজপথে নামার পরিকল্পনা, স্থানীয় পর্যায়ে মিছিল শুরুর নির্দেশনা এবং প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম রাখার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে।
অর্থের ঘাটতি মেটাতে বিদেশে থাকা নেতাকর্মীদের মাধ্যমে সাহায্য না পাওয়ার কারণে আপাতত প্রতিটি জেলায় স্থানীয় কর্মীদের নিয়ে মিছিল চালানোর নির্দেশ এসেছে। এমনকি রিকশাচালক, অটোরিকশা চালক বা বাস হেল্পারের ছদ্মবেশে অংশ নেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে, প্রয়োজনে আত্মরক্ষার্থে বৈদ্যুতিক শক ডিভাইস ও অন্যান্য সরঞ্জাম রাখার পরামর্শসহ।
পাঠানো হচ্ছে বিদেশে থাকা নেতাকর্মীদেরও। পরিকল্পনা অনুযায়ী, যদি ১০০০ কর্মী আসেন, তবে প্রয়োজনে ২০০ জন গ্রেপ্তার হলেও বাকিদের দিয়ে কর্মকাণ্ড চলবে। ১৫ লাখ সমর্থককে রাজপথে নামানোর লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে বলেও জানা গেছে।
এদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্যমতে, গত তিন দিনে ৪৭৬৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যার প্রায় ৬৫ শতাংশই আওয়ামী লীগের সংশ্লিষ্ট।
রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে প্রতিদিনই মিছিল হচ্ছে, হচ্ছে ফটো সেশনও। পরিস্থিতি সামাল দিতে মাঠে রয়েছে পুলিশ ও অন্যান্য বাহিনী। সম্ভাব্য সংঘাত, এমনকি রক্তক্ষয়ী পরিস্থিতির আশঙ্কায় গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও তৎপর।