বাঁশ-দড়ি বেয়ে মসজিদে যান ১১৬ বছর বয়সী অন্ধ মুয়াজ্জিন

প্রত্যন্ত অঞ্চলের গ্রামীণ পাকা সড়ক দিয়ে যাতায়াত করা পথচারী বা যানবাহনে চলাচলকারী যাত্রীদের হঠাৎ দাড়িয়ে দুচোঁখ মেলে দেখতে হবে, অন্ধ মুয়াজ্জিন মো. আব্দুর রহমান মোল্লার বাঁশ ও দড়ি বেয়ে রাস্তাপারাপার ও মসজিদে প্রবেশের দৃশ্য। ১১৬ বছর বয়সী এই বৃদ্ধ দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে বাড়ি থেকে মসজিদ পর্যন্ত যাচ্ছেন দড়ি ধরে।

নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার নগর ইউনিয়নের বড়দেহা গ্রামে মো. আব্দুর রহমান মোল্লার বাড়ি। চোঁখের দৃষ্টি শক্তি না থাকলেও মনের দৃষ্টি কমেনি তাঁর। অন্ধ মুয়াজ্জিনের এমন মহৎ কার্যক্রমে খুশি পরিবার, স্বজন ও এলাকাবাসী। পবিত্র রমজানেও প্রতিদিন সময় মত সেহরি খেয়ে রোজা রাখেন।

স্থানীয়রা জানায়, ‘২১ বছর ধরে আব্দুর রহমান অন্ধ। পরিবারে রয়েছে দুই স্ত্রী ও ২৫ জন ছেলে-মেয়ে। তাদের মধ্যে ছয়জন মারা গেছেন। বর্তমানে ১০ জন মেয়ে ও ৯ জন ছেলে ও দুই স্ত্রী বেঁচে আছেন। অন্ধ হওয়ার পরে বড় ছেলেকে নিয়ে ২০১১ সালে পবিত্র হজ পালন করেছেন তিনি। হজ করে আসার পর নিজ এলাকা বড়দেহা গ্রামে নিজের পাঁচ শতাংশ জমির ওপর তৈরি করেন একটি পাকা মসজিদ। মসজিদের নামেই তিনি জমিটি রেজিস্ট্রি করে দেন। গ্রামের মানুষ ও ছেলে-নাতীদের নিয়ে ২০১১ সাল থেকেই নিজের স্থাপন করা মসজিদে নামাজ আদায় শুরু করেন। সেই মসজিদের মুয়াজ্জিন হিসেবেও তিনি বিনাপারিশ্রমিকে দায়িত্ব পালন করছেন।

মো. আব্দুর রহমান মোল্লা জানান, মহান আল্লাহ পাক তাকে এখনও অনেক সুস্থ্য স্বাভাবিক রেখেছেন। কেটে গেছে ১১৬ বছর বয়স। দুর্ঘটনায় অন্ধ হয়ে গিয়েও তিনি নিজের মনোবল শক্ত রেখেছেন। নিজের স্থাপন করা মসজিদে মুয়াজ্জিন হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন।

নাটোরের খামারনাচকৈড় হাফেজিয়া মাদরাসার মুফতি হাফেজ মাওলানা মো. রেজাউল করিম বলেন, ‘আব্দুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য আজান দিতেন। আর তিনি ছিলেন অন্ধ। আব্দুর রহমান মোল্লা ১১৬ বছর বয়সে এসেও ইসলামের পথে যে মহতি কাজ করছে তার প্রতি মহান আল্লাহ পাক অবশ্যই সদয় হবেন। তার মনোবল অনেক দৃঢ়।’

Scroll to Top