হুথির ড্রোনে তছনছ ইসরাইলি বিমানবন্দর

ইয়েমেন থেকে হুতিদের ছোড়া একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের প্রধান বিমানবন্দরে আঘাত হেনেছে। ক্ষেপণাস্ত্রটিকে বাধা দিয়ে ধ্বংস করতে ব্যর্থ হয়েছে দেশটির প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। ইসরায়েলের জরুরি পরিষেবা মেগান ডেভিড আদম (এমডিএ) জানায়, রোববারের এ হামলার ঘটনায় ছয়জন আহত হয়েছেন। এ হামলার জন্য ইরানকে দায়ী করেছেন ইসরায়েলি নেতারা। তারা প্রতিশোধের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।

আইডিএফ জানিয়েছে, ইয়েমেন থেকে ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্রটিকে বাধা দিতে তারা বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেছে; কিন্তু সেটি বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরের ৩ নম্বর টার্মিনাল এলাকায় আঘাত হেনেছে। এক বিবৃতিতে বাহিনীটি বলেছে, ‘বেন গুরিয়ন বিমানবন্দর এলাকায় একটি আঘাত শনাক্ত হয়েছে। কেন তারা এ ক্ষেপণাস্ত্রটিকে আটকাতে ব্যর্থ হলো, তা নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে ইসরায়েলি বিমানবাহিনীর আকাশ প্রতিরক্ষা ইউনিট।’

জেরুজালেম পোস্ট জানিয়েছে, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এই প্রথম ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী ধেয়ে আসা ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ করতে ব্যর্থ হলো।

টাইমস অব ইসরায়েল বলছে, ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানার পর বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরে ফ্লাইটের ওঠানামা বন্ধ করে দেওয়া হয়। প্রায় এক ঘণ্টা বিমানবন্দরটির আকাশপথ বন্ধ থাকার পর ফের খুলে দেওয়া হয়। পরে এক বিবৃতিতে ইসরায়েলের বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ বলেছে, ‘ফ্লাইট চলাচলের জন্য বেন গুরিয়ন বিমানবন্দর খুলে দেওয়া হয়েছে। ফ্লাইটের ওঠানামা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরেছে।’

এমডিএ জানায়, আহতদের মধ্যে পঞ্চাশোর্ধ্ব এক ব্যক্তির আঘাত কিছুটা গুরুতর। বাকিরা সামান্য আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৫৪ ও ৩৮ বছর বয়সী দুই নারী বিস্ফোরণের ধাক্কায় আহত হন।

ঘটনাস্থল থেকে উড়ে আসা এক বস্তুর আঘাতে ৬৪ বছর বয়সী এক ব্যক্তি আহত হন। ২২ ও ৩৪ বছর বয়সী আরও দুই নারী নিরাপদ আশ্রয়ের উদ্দেশ্যে দৌড়ে যাওয়ার সময় পড়ে আঘাত পান। আহতদের সবাইকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। ক্ষেপণাস্ত্রের বিস্ফোরণের শব্দে আরও দুজন মারাত্মক উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। তাদেরও চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এ হামলার ঘটনায় তিনজন আহত হয়েছেন বলে প্রথমে জানিয়েছিল এমডিএ।

ইসরায়েলের এমপি ও যুদ্ধবিষয়ক সাবেক মন্ত্রী বেনি গান্টজ এ হামলার জন্য ইরানকে দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, এটি ইয়েমেনের নয়, এটি ইরানের (হামলা)। ইরানই ইসরায়েলের দিকে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে এবং তাদের অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে।

প্রতিশোধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ। তিনি বলেন, যে-ই আমাদের আঘাত করেছে, আমরা তাদের সাত গুণ জোরে আঘাত করব।

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বিমানবন্দরে হামলার পর এক ভিডিওবার্তায় বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমন্বয় করে হুতিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে ইসরায়েল।

তিনি বলেন, ‘আমরা অতীতে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি, ভবিষ্যতেও আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। এটি একবার করা কাজ নয়, তবে পাল্টা আঘাত চলবেই।’

বিশ্লেষকরা বলছেন, এখন এ ঘটনাকে কাজে লাগিয়ে ইরানের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে পারেন নেতানিয়াহু।

ইসরায়েলের রাজনৈতিক বিশ্লেষক আকিভা এলদার বলেন, এই হামলাকে কাজে লাগিয়ে ইরানের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য হামলার জন্য জনমত তৈরি করতে পারেন নেতানিয়াহু।

তিনি বলেন, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী যা চান তা হলো আইনগতভাবে আক্রমণ- গাজায় আক্রমণ, ইরানে আক্রমণ। তবে এটি নির্ভর করবে মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্তের ওপর। কারণ, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ইরানের সঙ্গে মুখোমুখি হওয়ার ব্যাপারে সতর্ক।

Scroll to Top