পরমাণু অস্ত্রের নকশার পরীক্ষা চালিয়েছে ইরান, চাঞ্চল্যকর তথ্য ইসরায়েলের

ইসরায়েল ইরানে হামলা চালানোর আগেই পরমাণু অস্ত্র তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় নকশার গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা চালিয়েছে তেহরান। এমন দাবি করেছে তেল আবিব। এ বিষয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করেছে ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েল।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ইরানে হামলার আগে ইসরায়েল জানতে পারে যে, ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের বিজ্ঞানীরা পারমাণবিক অস্ত্রের নকশা প্রক্রিয়ায় সফল পরীক্ষা চালিয়েছে। এর ফলে ইরান যদি চাইতো তবে মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যে বোমা তৈরি করতে সক্ষম হতো।

ইসরায়েলি সশস্ত্রবাহিনী পরিচালিত আর্মি রেডিও অজ্ঞাত নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে এই তথ্য জানিয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে টাইমস অব ইসরায়েল। রোববার হিব্রু গণমাধ্যম আর্মি রেডিও অজ্ঞাত নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, এই ‘মূল্যবান তথ্য’ ইসরায়েলের রাজনৈতিক নেতৃত্বকে শুক্রবারের প্রতিরোধমূলক হামলার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগেই দিয়েছিলেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।

প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, ইরানি বিজ্ঞানীরা কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে গোপনভাবে পারমাণবিক উপাদানকে একটি প্রকৃত বিস্ফোরক যন্ত্রে রূপান্তরিত করার প্রক্রিয়ার উপাদান নিয়ে কাজ শুরু করে। এই কাজ শুরু হয়েছিল ইসরায়েলে হামাসের অভিযানের পর ২০২৩ সালের শেষ বা ২০২৪ সালের শুরুর দিকে।

পারমাণবিক অস্ত্র নকশার এই প্রক্রিয়া ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের সমান্তরালে চলেছিল, যা পারমাণবিক বোমা তৈরির জন্য অপরিহার্য। মে মাসের শেষ দিকে আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ইরানের ইউরেনিয়ামের মজুত আরও সমৃদ্ধ করা হলে তা দিয়ে নয়টি পারমাণবিক বোমা তৈরি যাবে।

আর্মি রেডিও জানিয়েছে, ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) গোপন অস্ত্র প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করতে সক্ষম হয়। এক জ্যেষ্ঠ ইসরায়েলি সামরিক কর্মকর্তা শনিবার বলেন, ‘প্রাথমিক হামলায় নিহত সকল বিজ্ঞানী বছরের পর বছর ধরে পারমাণবিক বিস্ফোরণ যন্ত্রের বিকাশে জড়িত ছিলেন।’

আইডিএফ ৯ জন ইরানি পারমাণবিক বিজ্ঞানীর নাম প্রকাশ করেছে যাদের তারা প্রাথমিক হামলায় হত্যা করেছে। তারা হলেন—পারমাণবিক প্রকৌশল বিশেষজ্ঞ ফেরেদুন আব্বাসি, পদার্থবিদ মোহাম্মদ মেহেদি তেহরানচি, রাসায়নিক প্রকৌশল বিশেষজ্ঞ আকবর মোতালেবি জাদেহ, ম্যাটেরিয়ালস ইঞ্জিনিয়ারিং বিশেষজ্ঞ সাঈদ বার্জি, পদার্থবিদ আমির হাসান ফাকাখি, চুল্লি পদার্থবিজ্ঞান বিশেষজ্ঞ আবদ আল-হামিদ মনুচেহর, পদার্থবিদ মনসুর আসগারি, পারমাণবিক প্রকৌশল বিশেষজ্ঞ আহমদ রেজা জুলফাগারি দারিয়ানি এবং মেকানিক্স বিশেষজ্ঞ আলী বাখোয়েই কাতিরিমি।

আইডিএফ বলেছে, ‘নিহত সব বিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞ ইরানি পারমাণবিক প্রকল্পে জ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ উৎস ছিলেন এবং পারমাণবিক অস্ত্রের বিকাশে কয়েক দশকের সম্মিলিত অভিজ্ঞতা ছিল তাদের।’ বিজ্ঞানীদের অনেকেই মোহসেন ফাখরিজাদেহের উত্তরসূরি ছিলেন, যাকে ‘ইরানি পারমাণবিক প্রকল্পের জনক’ বলা হয়। যাকে ২০২০ সালে ইসরায়েল হত্যা করেছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।

আক্রমণ করা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না বলে জানিয়েছে ইসরায়েল। জায়নবাদী দেশটির সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, গত বছর ধরে তীব্রতর গোয়েন্দা গবেষণার পর বিজ্ঞানীদের নির্মূল করা সম্ভব হয়েছে, যা একটি শ্রেণীবদ্ধ পরিকল্পনার অংশ ছিল।

কয়েক ডজন গোয়েন্দা গবেষক কয়েক বছর ধরে ইরানের গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক বিজ্ঞানীদের ট্র্যাক করার লক্ষ্যে একটি গোপন প্রকল্পে কাজ করেছিলেন বলে জানিয়েছে আইডিএফ।

এরই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার ভোরে ইসরায়েল এবং ইরানের মধ্যে শত্রুতা প্রকাশ্য সংঘাতের এক অভূতপূর্ব পর্যায়ে পরিণত হয়। ইরান এবং তার পারমাণবিক কর্মসূচির বিরুদ্ধে একটি বড় আক্রমণ শুরু করে ইসরায়েল। পারমাণবিক স্থাপনা, ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি, শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা এবং পারমাণবিক বিজ্ঞানীদের ওপর চালানো হয় নজিরবিহীন হামলা।

সূত্র: টাইমস অব ইসরায়েল

Scroll to Top